মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৫, ১০:৪৮ পূর্বাহ্ণ

বিএসএএ নির্বাচন ৯ অক্টোবর, পূর্ণাঙ্গ প্রার্থী তালিকা দিয়েছে ঐক্য পরিষদ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএএ)-এর ২০২৫-২৭ মেয়াদের নির্বাচন আগামী ৯ অক্টোবর চট্টগ্রামের টাইগার পাসস্থ নেভি কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এবারের নির্বাচনে মোট ২৪টি পদের বিপরীতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৩৩ জন প্রার্থী।

ঐক্য পরিষদ পূর্ণাঙ্গ প্যানেল হিসেবে ২৪টি পদের জন্য প্রার্থী ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে, সম্মিলিত পরিষদ মাত্র ৮টি পদের জন্য প্রার্থী দিতে সক্ষম হয়েছে। এ অবস্থায় তাদের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বলে জানা গেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, পরপর দুই মেয়াদে পরিচালনা পর্ষদে থাকা সদস্যরা এবারে প্রার্থী হতে পারবেন না। তাছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানের মালিক ব্যতীত তার প্রতিনিধি প্রার্থী হতে পারবেন না। এই বিধান অনুসারে সম্মিলিত পরিষদের গত বোর্ডের ২৪ জন পরিচালকের মধ্যে ২২ জনই এবারের নির্বাচনে অযোগ্য হয়ে পড়েছেন।

অবশিষ্ট দুইজনের মধ্যে একজন প্রার্থী হননি, অন্যজন ঐক্য পরিষদের ব্যানারে অংশ নিচ্ছেন। ফলে প্রার্থী সংকটে সম্মিলিত পরিষদ, পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিতে ব্যর্থ হয়েছে। নির্বাচনের আগে থেকেই তারা বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে কার্যত পিছিয়ে পড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে।

বিএসএএ নির্বাচনে ঐক্য পরিষদের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএএ)-এর ২০২৫-২০২৭ মেয়াদের নির্বাচনে ঐক্য পরিষদ পূর্ণাঙ্গ প্যানেল হিসেবে ২৪ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে।

চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন ক্যাপ্টেন মো. সালাহ উদ্দিন চৌধুরী (নাফ মেরিন সার্ভিস)।
সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে আজিম রহিম চৌধুরী (কে এম সি শিপিং লাইন) এবং অপর সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে মো. আলী আকবর (সেভেন সীজ শিপিং লাইন্স)। ভাইস চেয়ারম্যান পদে মো. মশিউল আলম স্বপন (এ.এ. শিপিং সার্ভিসেস) এবং অপর ভাইস চেয়ারম্যান পদে ক্যাপ্টেন মো. আলাউদ্দিন আল আজাদ (মার্স শিপিং অ্যান্ড লজিস্টিকস)।

পরিচালক (জেনারেল ক্যাটাগরি) পদে ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আলী আর্গো শিপিং সার্ভিসেস লিমিটেড, অঞ্জন মজুমদার এশিয়াবাল্ক মেরিটাইম প্রা. লি., কাজী মনসুর উদ্দীন কে এস এম শিপিং এজেন্সিস প্রা. লি., সরফরাজ কাদের (রাশেল) – ইউনাইটেড সী ট্রান্সপোর্ট কো., মো. দিদারুল আলম চৌধুরী গো পোর্ট শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং, মো. আনোয়ার হোসেন খান (হাসান) ওশেন কিং কন্টেইনার লাইন্স, মো. আব্দুল কুদ্দুস মাল্টিমোভ শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং লিমিটেড, প্রফেসর নূর উন নবী (ইমরান) এইচ সি মেরিন লিমিটেড, এস এম আনামুল করিম কন্টেইনার ওয়ার্ল্ডওয়াইড এক্সপ্রেস (বিডি) লিমিটেড, আকিব হাসনাত সামসী জোহাক শিপিং লিমিটেড, মো. শফিউল আলম – এভার চিয়ার শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং, এ.টি.এম. জহিরুল ইসলাম এস.কে. শিপিং বিডি, মো. আনোয়ারুল কবির কামরুল আমান শিপিং এজেন্সি।
পরিচালক (অ্যাসোসিয়েট ক্যাটাগরি) মুয়াম্মার আহমেদ মেরিটাইম সার্ভিসেস লিমিটেড, মো. হুমায়ুন কবির পাটোয়ারী পার্ক শিপিং লাইন, মোহাম্মদ শাহীন এডমিরাল শিপিং লাইন্স, ফরহাদুল আলম চৌধুরী, প্রাইমেক্স লজিস্টিক ইন্টারন্যাশনাল, মো. মনসুর আলী সাউথ ইস্ট মেরিটাইম, মাসুদ আহমেদ – সামুন্দা শিপিং লাইন্স লিমিটেড।
ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, অভিজ্ঞতা, সততা ও ঐক্যের ভিত্তিতে গঠিত এই প্যানেল বিএসএএ সদস্যদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও সংস্থার কার্যক্রমে আরও গতিশীলতা আনবে।
সম্মিলিত পরিষদ থেকে সীমিত প্রার্থী ঘোষণা:
অন্যদিকে, সম্মিলিত পরিষদ থেকে এবারের নির্বাচনে প্যানেলে মোট ৮ জন প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছেন। চেয়ারম্যান পদে আহসান ইকবাল চৌধুরী আবির (ইন্টারমডেল পিটিই লিমিটেড),
সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে মো. আব্দুল মালেক (বেঙ্গল শিপিং লাইন লিমিটেড),
অপর সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে জহুর আহমেদ (সীকম শিপিং লাইনস লিমিটেড),
এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে আকতার কামাল চৌধুরী (সিনোবেন শিপিং কো. লি.)।
পরিচালক (জেনারেল ক্যাটাগরি) মো. তোহিদুল ইসলাম – এবিসি শিপিং লাইনস, আহমেদ তাসিন আসাদুল্লাহ – ইন্টারপোর্ট শিপ এজেন্টস লি., মো. শহীদ উল্লাহ চৌধুরী – দ্য আকিব শিপিং লাইনস লি.।
পরিচালক (অ্যাসোসিয়েট ক্যাটাগরি) জুনাইদ আহমেদ রাহাত – মিউচুয়াল শিপিং লিমিটেড
এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএসএএ-এর সাবেক চেয়ারম্যান (২০১৯–২১) আহসানুল হক চৌধুরী (ভেগা মেরিন প্রা. লি.)।
শিপিং খাতের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক মেয়াদ ধরে সম্মিলিত পরিষদের নেতৃত্বে থাকা কিছু অভিজ্ঞ সদস্য এবার প্রার্থী হতে পারেননি বিধায় তাদের পক্ষে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল গঠন সম্ভব হয়নি। ফলে এবারে তারা সীমিতসংখ্যক প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
অন্যদিকে, ঐক্য পরিষদের পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণার পর নির্বাচনী মাঠে তাদের কার্যক্রমে গতি এসেছে। ভোটারদের উল্লেখযোগ্য অংশ ঐক্য পরিষদ ও সম্মিলিত পরিষদ দুই প্যানেলের প্রার্থীদের যোগ্যতা ও কর্মকাণ্ড মূল্যায়ন করে নিজেদের সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
শিপিং মহলে এখন আলোচনার বিষয় যে, সম্মিলিত পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফ দীর্ঘদিন ধরে অ্যাসোসিয়েশনকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে নানাবিধ অনিয়ম ও দুর্নীতিতে লিপ্ত আছেন। নতুন কমিটি নির্বাচিত হলে তার এসব কর্মকাণ্ড প্রকাশ পাবে এই আশঙ্কায় তিনি যেকোনো মূল্যে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
এইবার নির্বাচনে নিজেরা প্রার্থী হতে না পেরে এবং তাদের পক্ষে অন্যদের প্রার্থী করাতেও ব্যর্থ হয়ে, সম্মিলিত পরিষদ এখন নানা রকম কৌশল ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। পরিচালক পদে পর্যাপ্ত প্রার্থী না পেলেও অন্তত শীর্ষ তিনটি পদ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। এজন্য তারা দুইজন হাই-প্রোফাইল ব্যক্তিকে প্রার্থী হতে রাজি করিয়েছেন, যারা বাস্তবে অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকাণ্ডে সময় দিতে সক্ষম নন। উদ্দেশ্য একটাই তাদের নির্বাচিত করে এনে আরিফের অ্যাসোসিয়নের নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত রাখা।
কিন্তু যখন তারা বুঝতে পারে যে ঐক্য পরিষদের প্রার্থীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য এবং অধিকাংশ ভোটার ঐক্য পরিষদের পক্ষে, তখন থেকেই তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়া বানচালের অপচেষ্টায় নেমেছে।
সম্মিলিত পরিষদের নেতৃত্ব দীর্ঘদিন ধরে অ্যাসোসিয়েশনকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে আসছে। তারা সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ দায়ের করে বিএসএএ-তে প্রশাসক বসানোর অপচেষ্টা চালিয়েছিল, কিন্তু সরকারের উচ্চপর্যায়ে সত্য উদঘাটিত হওয়ায় সেই ষড়যন্ত্র ভেস্তে যায়।
এই ব্যর্থতার পর তাদের পক্ষের আবির সসংবাদপত্রে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। এরপর থেকে সম্মিলিত পরিষদের আরিফ গং সম্পূর্ণ অসহায় ও দিশেহারা হয়ে কিছু হলুদ সাংবাদিককে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে ঐক্য পরিষদের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নামসর্বস্ব অনলাইন মিডিয়ায় ঘৃণ্য অপপ্রচার চালাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐক্য পরিষদের একজন প্রার্থী বলেন “আমরা বিশ্বাস করি, সদস্যবৃন্দ তাদের এই নোংরা রাজনীতি ও অপপ্রচারের জবাব ভোটের মাধ্যমে দেবেন ঐক্য, সততা ও পরিবর্তনের প্রতীক “ঐক্য পরিষদ”-এর প্রার্থীদের পক্ষে ভোট দিয়ে” তাদের জয়ী করবেন।

আরো